Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

পশুরহাট নিয়ে মহাবিপদ

আবদুর রহিম

জুলাই ৮, ২০২০, ০৭:০৭ এএম


পশুরহাট নিয়ে মহাবিপদ

পশুরহাট বসিয়ে স্থাস্থ্যবিধি মানা অসম্ভব। এর আগেও সরকারি ছুটি ঘোষণার পর কেউ সচতেনতা অনুসরণ করেননি। এবার পশুরহাটেও নিয়ম কিংবা শর্ত মেনে হাটে পশু কেনা সম্ভব নয়। এজন্য দেশের সচেতন চিকিৎসকরা চান এ বছর পশু কুরবানি না করে আলেমরা যাতে বিকল্প পথ বের করেন। অন্যদিকে আলেমরা কৌশলী হয়ে আল্লাহর বিধান পালনে অটল অবস্থানে রয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, আলেম-ওলামা ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের কাছে অনুরোধ— এবার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা আমরা পশু কুরবানি করবো না। কুরবানির টাকাটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও অসহায়দের মাঝে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। পশুরহাট এখন সবচেয়ে বড় বিপদ। একজন লোক ১০-১৫টা গরু জবাই করবে তার মাধ্যমেই ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে।

একসাথে বসে মাংস কাটাকাটি করবে সেখানেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। হাতে ভাইরাস থাকলে তার মাধ্যমে মাংসেও ভাইরাস ফ্রিজে চলে যাবে। সব ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে আলেম-ওলামারা বসে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। পশু কুরবানি ছাড়া ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে কোনো সমাধান আছে কিনা, আলেমরা বসে এখনই ঠিক করা দরকার।

অন্যদিকে আলেমরা বলছেন, পশু কুরবানি করা একটা ইবাদত। আর অসহায় যারা রয়েছেন বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের আর্থিক সাহায্য করা সেটা আরেকটা ইবাদত। দুটোই ভিন্ন ইবাদত। কুরবানি ওয়াজিব এটা তাকে করতেই হবে। মূলত কুরবানি বন্ধ করে দান করা যাবে না। হজ না করে যেমন হজের টাকা কাউকে দান করা যাবে না, তেমনি কুরবানি না করে পুরো টাকা কাউকে দান করা যাবে না।

তাহলে কুরবানি আদায় হবে না। কেউ ঢাকার পরিবেশে যদি না করতে পারেন তাহলে তিনি গ্রামে গিয়ে করবেন, যদি গ্রামেও পরিস্থিতি খারাপ হয় তাহলে যেখানে পরিবেশ ভালো সেখানে করতে পারবেন। মিনিমাম যেটি ওয়াজিব সেটি করতে হবে। যেভাবে সহজ হয় সেই পদ্ধতিটা অনুসরণ করতে হবে। তবে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

দেশের করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশুরহাটে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা অসম্ভব, গরুরহাট বসানো হলে আরও বড় সর্বনাশ হতে পারে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের এখনো এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। সচেতনতার কথা বলে কোনো লাভ হবে না।

পশু কেনাবেচায় জনসমাগম হবে এবং এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানলে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, প্রয়োজনে মানতে বাধ্য করতে হবে।

ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই আবশ্যিকভাবে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, মাথার ক্যাপ ও সম্ভব হলে গাউন পরতে হবে। মাস্ক পরার হারটাও এখন কম দেখা যাচ্ছে। তাহলে কী করে পশুরহাটে স্বাস্থ্যবিধি মানবো? কতজন স্বেচ্ছায় মানবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ঢাকার দুই সিটি মিলিয়ে পশুরহাট বসবে মোট ২৪টি। এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হবে ১৪টি। সারা দেশের জেলা-উপজেলায়ও পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  বাস্তবে অনুমোদনের বাইরেও কুরবানিতে আরও অনেক হাট বসে। সব মিলিয়ে এই হাটের সংখ্যা সারা দেশে পাঁচ হাজারের কম হবে না। সারা দেশেই কুরবানির হাটের জন্য একটি স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

তারা বলছেন, পশুরহাটের এখনো অনেক বাকি। তার আগেই চূড়ান্ত হবে স্বাস্থ্যবিধি। গত বছর কুরবানির জন্য দেশে এক কোটি ১৭ লাখ পশু ছিলো। এর মধ্যে গরু ৪৫ লাখ এবং ছাগল ও ভেড়া ৭১ লাখ। এ বছরও হিসাব অনেকটা কাছাকাছি। কিন্তু এবার বাজার মন্দা হবে বলে বিক্রেতাদের আশঙ্কা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, কুরাবানির পশুরহাটের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ একটি গাইডলাইন তৈরি করছে। চূড়ান্ত হলে সেটা অনুসরণ করেই পশুরহাট বসবে। আমাদের নিজস্ব টিম এবং মোবাইল কোর্ট থাকবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সদস্য ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে পশু কেনাবেচায় জনসমাগম হবে এবং এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানলে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। প্রয়োজন বিবেচনা করে পশুরহাট বন্ধ করা যাবে না।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, প্রয়োজনে মানতে বাধ্য করতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই আবশ্যিকভাবে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, মাথার ক্যাপ ও সম্ভব হলে গাউন পরতে হবে। পশুরহাটে যেন অসুস্থ পশু না আনা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো পশু অসুস্থ মনে হলে ক্রেতারা তার কাছে যেন না যায়। আর গ্লাভস পরা ছাড়া পশুর গায়ে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, পশুরহাট বসিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা অসম্ভব। আমি আলেম-ওলামা ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের কাছে অনুরোধ করবো, এবার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা আমরা পশু কুরবানি করবো না। কুরবানির টাকাটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও অসহায়দের মাঝে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। পশুরহাটই এখন সবচেয়ে বড় বিপদ। একজন লোক ১০-১৫টা গরু জবাই করবে তার মাধ্যমেই ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে।

একসাথে বসে মাংস কাটাকাটি করবে সেখানেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। হাতে ভাইরাস থাকলে তার মাধ্যমে মাংসেও ভাইরাস ফ্রিজে চলে যাবে। সব ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে আলেম-ওলামারা বসে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার পশু কুরবানি ছাড়া ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে কোনো সমাধান আছে কিনা। আর যারা খামারি আছে সরকার যাতে তাদের ব্যবস্থা করেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই পশুগুলো কেনা যায় কিনা সরকারকেও ভাবতে হবে।

বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, ইসলামের যে সমধান তা আলেম-ওলামাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। পশু কুরবানি করা এটা একটা ইবাদত। আর অসহায় যারা রয়েছেন বিশেষ করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের আর্থিক সাহায্য করা সেটা আরেকটা ইবাদত।

দুটোই ভিন্ন ইবাদত। কুরবানি ওয়াজিব এটা তাকে করতেই হবে। ঢাকার পরিবেশে যদি না করতে পারেন তাহলে তিনি গ্রামে গিয়ে করবেন। যদি গ্রামেও পরিস্থিতি খারাপ হয় তাহলে যেখানে পরিবেশ ভালো সেখানে করতে পারবেন। মিনিমাম যেটি ওয়াজিব সেটি করতে হবে।

পাশাপাশি অবশ্যই গরিবদের সাহায্য করতে হবে। কুরবানির পশুর মাংসে গরিবদের হক আছে, অবশ্যই গরিবদের নিয়ে সবাই একসঙ্গে ভাগ করে খেতে হবে। এখন যেহেতু করোনার কারণে বাজারে যাওয়া কিছুটা বিপদ তাই অনলাইনে কেনাকাটা করা যেতে পারে। যেভাবে সহজ হয় সেই পদ্ধতিটা অনুসরণ করতে হবে। তবে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবুল কাসেম গাজী বলেন, কুরবানিটা হানাফি মাজহাবের মতে ওয়াজিব, অন্যান্য মাজহাবের মতে সুন্নাত। সুন্নাত হোক আর ওয়াজিব হোক সবাই কিন্তু কুরবানি সব সময় দেয়। কুরবানি দেয়া ফরজ না। কুরবানি যারা দিয়ে আসছেন তারা কেউ বাদ দিচ্ছেন না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর ছিলেন, তিনি নিয়মিত কুরবানি দিয়েছেন। কুরবানি না করে অসহায়দের দান করা মুস্তাহাব এমন একটা মতামত এসেছে। মূলত কুরবানি বন্ধ করে দান করা যাবে না। হজ না করে যেমন হজের টাকা কাউকে দান করা যাবে না তেমনি কুরবানি না করে পুরো টাকা কাউকে দান করা যাবে না। তাহলে কুরবানি আদায় হবে না।

তবে একটা পদ্ধতি আছে , যেমন কেউ এক লাখ বা দুই লাখ টাকা কিংবা আরও বেশি দিয়ে কুরবানি দেন তারা অর্থের সংখ্যাটা কমিয়ে অন্যকে দান করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যিনি কুরবানি দেবেন তাকে কি হাটে গিয়েই পশু নিতে হবে কিনা, কিংবা পশু জবাই করতে ধরতে হবে কিনা।

ওজরের কারণে কিংবা যেকোনো কারণে তিনি উপস্থিত না থাকলেও সমস্যা নেই কুরবানি হয়ে যাবে। এখন কসাইরাই সব করে দিচ্ছেন, এটা নিয়ে মনে হয় খুব চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। যারা কাঁটাছেড়া করেন তাদের দায়িত্ব দিয়ে দিলেই হবে। কুরবানির গোস্ত কুরবানি দাতা গ্রহণ না করলেও কোনো অসুবিধা নেই। গোস্ত গরিবদের দিয়ে দিলে কোনো সমস্যা হবে না।
আমারসংবাদ/এআই