Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

আক্রান্তের শীর্ষে যুবারা

মাহমুদুল হাসান

এপ্রিল ৮, ২০২০, ০৬:৪০ পিএম


আক্রান্তের শীর্ষে যুবারা
  •  শনাক্তের এক মাসে রোগী ২১৮ জন
  • পঞ্চাশোর্ধ্বদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি

দেশের যুবারা সবচেয়ে বেশি করোনা-আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সেখানে দেখা গেছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।

সরকারি তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে, দেশে মৃত্যুতে বয়ষ্করা বেশি হলেও আক্রান্তের তালিকায় কিশোর-যুবারা বেশি। গত বছর ভয়াবহভাবে আঘাত হানা ডেঙ্গুতেও যুবারা বেশি আক্রান্ত হয়েছিল।

অথচ যুবাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। যেকোনো রোগের সংক্রমণ মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। তাই তাদের যেকোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার তালিকায় পেছনে থাকার কথা।

কিন্তু বাংলাদেশে মহামারিতে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আবার নারীদের চেয়ে করোনায় পুরুষ দ্বিগুণ আক্রান্ত হচ্ছে। নারী ও শিশুরা অন্যদের চেয়ে কম আক্রান্ত হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাস কোনো বয়স কিংবা শ্রেণি মানে না। এর সুরক্ষা ব্যক্তির নিজেকে নিশ্চিত করতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে, তাহলেই করোনা থেকে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

এক্ষেত্রে দেশের নারী ও শিশুরা বড় উদাহরণ। তারা ঘর থেকে কম বের হয় ফলে তারা আক্রান্তও কম হচ্ছে। যতজন আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে তারাও বাইরে থেকে নয়, পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছে।

কিশোর ও যুবকদের আক্রান্ত বেশি হওয়ার পেছনে চিকিৎসকরা বলছেন, এই বয়সের মানুষ আবদ্ধ থাকতে চায় না। ঘুরে বেড়ায়। বহুজনের সংস্পর্শে আসে। ফলে তাদের আক্রান্তেরও ঝুঁকি বেশি রয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, গতকাল নতুন ৫৪ রোগীসহ দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৮ জনে।

এর মধ্যে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সি রয়েছে ৮৩ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আছে ৪৭ জন। ষাটোর্ধ ৩৫ জন। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সি ৩৩ জন। ১১ থেকে ২০ বছরের কিশোর ও যুবক আছে আরো ১৪ জন এবং ১০ বছরের নিচে শিশু আছে ছয়জন।

নারী পুরুষের আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, নারীর দ্বিগুণ পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ২১৮ জনের মধ্যে ১৪৮ জন পুরুষ এবং ৭০ জন নারী। গতকাল মৃত্যু তিনজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। এদের অধিকাংশ ৫০ বছরের বেশি বয়সি।

গতকাল বুধবার প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজন ১১ থেকে ২০ বছর বয়সি, ২১ থেকে ৩০ বছরের ১৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের সাতজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের সাতজন।

এছাড়া আরও ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের বয়স ষাটের ওপরে। নতুন রোগীদের মধ্যে ৩৯ জনই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, কিশোর যুবকদের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কোনো সম্পর্ক নেই।

এই বয়সের লোকজন বাইরে বেশি বের হয়। আড্ডাবাজি করে। নানা জনের সংস্পর্শে আসে আর এ জন্য এদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। তবে তাদের মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে কম।

একই কারণ নারীদের চেয়ে পুরষ বেশি আক্রান্ত হওয়ার জন্যও। কারণ নারী ও শিশুরা বাইরে খুব কম বের হয়। এ জন্য তারা আক্রান্তও কম হচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। সবাই জাতীয় কোয়ারেন্টাইন মেনে চললে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে। এ সময় তিনি করোনা প্রতিরোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও অনুরোধ জানান।

দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি : এক মাসের ব্যবধানে তিন থেকে রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে।

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির বিষয়ে জানাতে গিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এ নিয়ে দেশে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ২১৮ জনে। নতুন করে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে গত দুই দিনে নতুন করে কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেনি।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৬৩টি এবং ঢাকার বাইরে ৪২৫টি নমুনার পরীক্ষা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ১৬৪টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমেও এগুলো করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে এক হাজার ৫৫০টি।

রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ১৪৩টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। সবমিলিয়ে, দেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে মোট সাত হাজার ৬৯৩টি। সেই সঙ্গে সরকারি স্থাপনাগুলোকেও নতুন করে আইসোলেশন শয্যা হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া চলছে।

সব হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা আছে মোট ১১২টি। প্রত্যেকটি আইসিইউর সঙ্গে ভেন্টিলেটর থাকে। কোনো কোনো হাসপাতালে এর সঙ্গে ডায়ালাইসিস শয্যাও আছে। এরকম আছে ৪০টি। আমরা মনে করি, এটা আরও বাড়ানো দরকার। প্রতি মুহূর্তে এটা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে ১৬ঠি সর্বশেষ খুলনা ও সিলেট মেডিকেল কলেজে এই পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

আর এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৯১ হাজার ২৯২টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সংগ্রহ করেছি। যার মধ্যে চার লাখ ৭০ হাজার ৭৭৪টি বিতরণ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের মজুদ আছে দুই লাখ ২০ হাজার ৫১৮টি পিপিই।

প্রথমে একটু সমস্যা ছিলো, এখন আমরা বেশি করে দিচ্ছি সব জায়গায়। ২১ হাজার করোনা পরীক্ষার কিট ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ৯২ হাজার আমাদের সংগ্রহে আছে। ২১ হাজার কিট যখনই শেষ হয়ে যাবে, আমাদের মজুদ ৭১ হাজার থেকে দেবো।

আমারসংবাদ/এসটিএমএ