Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

ব্যস্ত দক্ষিণ সিটির হটলাইন কর্মহীন কেউ পাননি খাদ্যসামগ্রী

বশির হোসেন খান

এপ্রিল ৪, ২০২০, ০৭:১৬ পিএম


ব্যস্ত দক্ষিণ সিটির হটলাইন কর্মহীন কেউ পাননি খাদ্যসামগ্রী

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মানেই হাবিবুল ইসলাম সুমন। পদ তার সহকারী প্রটোকল অফিসার। তবে ডিএসসিসিতে তিনি একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত।

কারণ তিনি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অতি ঘনিষ্ঠদের একজন। আবার নিজ বাসাও একই এলাকায়। যদিও তিনি যে পদে কর্মরত আছেন, সংস্থাটির অর্গানোগ্রামে আদৌ সে পদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

সিটি কর্পোরেশনের সব দপ্তরে তার অবাধ বিচরণ। কর্মহীন মানুষের জন্য হটলাইন সেবা চালু সেই কমিটিতে তার নাম অন্তর্ভূক্ত না থাকলেও তার ইশারায়ই চলে সব কর্মকাণ্ড।

গতকাল তার নেতৃত্বে ছয় সদস্যর একটি বৈঠক হয়। যার প্রমাণ— ওই কর্মকর্তার ফেসবুকে ছবি রয়েছে। পছন্দের কর্মকর্তারা সুবিধা দিতে ডিএসসিসিতে হরহামেশা এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও। চলছে দুদকের ছায়া তদন্ত। তবুও নিশ্চুপ কর্মকর্তারা। চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।

হাবিবুল ইসলাম সুমন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। লোকলজ্জায় যারা খাদ্যসামগ্রী নিতে আসছেন না। তাদের কাথা চিন্তা করেই গত দুই দিন ধরেই নাগরিকদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।

এই নম্বরে কেউ পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, গত দুই দিনে ফোন এসেছে ৪২০টি। কিন্তু কয়জনের বাসায় খাদ্য দিয়েছেন তার কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।

একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘সবাই তো বলছে সিটি কর্পোরেশনে সুমন সব। আমি বলছি সিটি কর্পোরেশন মানে সুমন। সুমন যা বলে তাই হয়। সুমনের ইশারায়ই চলে সব।’ এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে সাধারণ ছুটি। সব নাগরিককে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকের বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা খাদ্য সহায়তা দিলেও অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে তা নিতে পারছেন না।

এসব কিছু বিবেচনা করে হটলাইন চালু করেছে ডিএসসিসি। আর খাদ্য সহায়তা পেতে ০১৭০৯-৯০০৭০৩ ও ০১৭০৯-৯০০৭০৪ এ দুটিতে কল দিলেই বাসায় পৌঁছে যাবে খাদ্য।

অভিযোগ সূত্র জানায়, কল দিলেই বিজি। এই বিজি সবসময়। এই নম্বর দুটিতে এক নাগাড়ে দুই ঘণ্টা চেষ্টা করেও ব্যর্থ। শেষ পর্যন্ত বিজি রয়েছে এই নম্বর। তার মানে বিজি মুডে রেখেছে ডিএসসিসি।

গতকাল সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও কর্মহীন মানুষ।

এর মধ্য মিডিয়ার কাছে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর মাদারটেকের মিজানুর রহমান ০১৮১৯১৯২৬-০, পূর্ব মাদারটেকের কমল ০১৭৮৭০৬৬৮-১, দক্ষিণ বনশ্রীর ইমান আলী ০১৯৪২৮১০৭-৫, পূর্ব গোড়ানের নাজিমুর রহমান ০১৯৮৮৮৭৯৮-৬, নন্দীপাড়ার মহিউদ্দিন ০১৯১৬৮৩৭৩-৯, খিলগাঁওয়ে মনির ০১৯৩৪৯৫২৫-৮, বড় বটতলা নন্দীপাড়ার আলী ০১৬৭৭৩৮০০-৮, বাসাবোর রুবেল ০১৯২৯২১৭৪-০, শাহজাহানপুরের হবি ০১৬৭৯৬১০৪-৬, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হাসু মিয়া ০১৯২৮৯৬৪২-৩, গুলিস্তানের আলাউদ্দিন ০১৭৮৩৩০৭৯-৮, বংশালের রতন ০১৭৪৬২০৫৯-৮, মানিকনগরের সাঈদ ০১৯৫৬৪৮৫৬-৮।

গুলিস্তানের আলাউদ্দিন বলেন, এটা এক রমকের প্রতারণার ফাঁদ, নম্বর দুটি সবসময়ের জন্য বিজি পাওয়া যাচ্ছে। আসলে সেবার উদ্দেশ্য নিয়ে এই নম্বর চালু করা হয়নি। আমার বাসায় চাল ডাল কিছু নেই। এখন বেতন পাইনি।

অফিস বন্ধ, এই মাসে পাবো কি না তাও জানি না। মনে করেছিলাম ফোন করলেও তো বাজার দিয়ে যাবে, খাবার জন্য চিন্তামুক্ত থাকতে পারবো। কিন্তু ফোন তো পাচ্ছি না। সব শেষে লজ্জা ফেলে সুমন ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম।

সে উল্ট ধমক দিয়ে বলে— হটলাইনে ফোন দেন। আমাকে ফোন দিলেন কেন। ভাই হটলাইনে তো পাচ্ছি না। না পেলে আমি করবো কী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, হটলাইন আসলে লোভ দেখানো ছাড়া আর কিছু না। কারণ সুমনের ইশারা ছাড়া কিছু নয়।

সে সব চাইতে বেশি ক্ষমতাধর। আমার নাম কাউকে বলবেন না। নাম জানলেই চাকরি চলে যাবে। এমন আমি নয়, অনেকেই আছেন। সুমনের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলবেন না।

আমারসংবাদ/এসটিএমএ