Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১১ মে, ২০২৪,

প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে মহামারি

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ১৪, ২০২০, ১০:১৮ পিএম


প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে মহামারি

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্ব ব্যবস্থাকে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। প্রাণঘাতী এ নয়া ভাইরাস সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য বাদ যায়নি কোথাও।

ইতোমধ্যে উহান থেকে এ ভাইরাস অন্তত ১২৯ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে গোটা ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ভাইরাস এখনই বিশ্ববাসীকে মুক্তি দেবে না। আরো বেশ কিছুদিন এর প্রাদুর্ভাব থাকবে। শীতপ্রধান দেশগুলোতে এর দাপট সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।

অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রতি শতকে বিশ্বে নতুন নতুন প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এতে বিশ্বে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। সর্বশেষ ১৯১৯-২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে এক নয়া ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। এতে প্রায় পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।

ঠিক তেমনিভাবে এক শতক পর এ বছর নভেল করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) একের পর এক দেশ সংক্রমিত হচ্ছে। উহানে উৎপত্তি হলেও চীন গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সংগ্রাম করে অবশেষে তারা মুক্তির পথে।

চীনে গতকাল মাত্র ১১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস এখন গোটা ইউরোগ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাদ যায়নি মধ্যপ্রাচ্যও।

করোনা শুধু ইতালিতে শুক্রবার ২৫০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গতকাল ইরানে নতুন করে ৯৭ জনের প্রাণহানি হয় করোনার কারণে। বিশ্বে অচলাবস্থা আরো ঘনীভূত হয়েছে।

ইউরোপের ২৬ দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ সুবিধায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অচলাবস্থাও জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার দ্বিতীয় কেন্দ্রবিন্দু এখন ইউরোপ। আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বত্র করোনার ছোবল। করোনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই শেষে সফল চীন অসহায় ইতালির পাশে দাঁড়িয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে চীন নিজেদের অভিজ্ঞতা ইতালিতে প্রয়োগের জন্য একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে। বন্ধুর বিপদে এ সহযোগিতা সত্যিই বড় মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার পথে।

সঙ্কটাবস্থায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উহান থেকে ভারতের নাগরিকদের সঙ্গে দিল্লিতে ২৩ বাংলাদেশি ফিরে আসেন। সেখানে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন শেষে গতকাল শনিবার দেশে ফিরেছেন তারা।

২৩ বাংলাদেশি এখন সুস্থ আছেন। তাদের কারো শরীরে করোনা সংক্রমিত হয়নি। গতকাল শনিবার সকালে ভারতীয় বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইটে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

এদিকে অপর এক ফ্লাইটে ইতালি থেকে ১৪২ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। ইতালিতে মহামারি চলায় তাদের সবাইকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন শেষে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মিলবে।

এসব সিদ্ধান্তের পর স্বজনরা খুশি হলেও ইতালিফেরত বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ করেন। তারা পুলিশের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তবে তাদের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষে জড়ায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রবাসীরা পরে শান্ত হয়ে যান। তাদের এখন আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

বিশ্বের সর্বশেষ অবস্থা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্যমতে, নভেল করোনা ভাইরাস এখন বিশ্বের অন্তত ১২৯ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার ৩২০ জন আক্রান্ত হয়েছে।

এদের মধ্যে ৭২ হাজার ৫৫০ জন মানুষ সুস্থ্য হলেও প্রাণ হারিয়েছে আরো পাঁচ হাজার ৩৮৮ জন। এর মধ্যে চীনে ৮১ হাজার ২১ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মারা গেছে তিন হাজার ১৯৪ জন। এর পরই রয়েছে ইতালির অবস্থা। সেখানে ১৭ হাজার ৬৬০ জন আক্রান্তের মধ্যে এক হাজার ২৬৮ জন মারা গেছে।

ইরানে গতকাল ৯৭ জনসহ এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬১১ জন। আর আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৩৬৪ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় আট হাজার ৮৬ জন আক্রান্তের বিপরীতে ৭২ জন মারা গেছে। স্পেনে চার হাজার ২৩২ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুর হার বেশি।

সেখানে ১২০ জন মারা গেছে। ফ্রান্সে তিন হাজার ৬৪০ জন আক্রান্ত ও ৭৯ জন মারা গেছে। জার্মানিতে তিন হাজার ৬২ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হার তুলনামূলক কম। মাত্র ছয়জন মারা গেছে।

এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার ৬৭৮ জন, সুইজারল্যান্ডে এক হাজার ১২৫ জন, নেদারল্যান্ডে ৮০৪ জন, যুক্তরাজ্যে ৮০২ জন, ডেনমার্কে ৮০১ জন, সুইডেনে ৭৭৫ জন, নরওয়েতে ৭৫০ জন, জাপানে ৭১৬ জন, বেলজিয়ামে ৬৯৭ জন, অস্ট্রিয়াতে ৫০৪ জন, কাতারে ২৬২ জন, বাহরাইনে ২১০ জন, সিঙ্গাপুরে ২০০ জন, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায় ১৯৭ জন করে আক্রান্ত। আরো আছে।

কানাডায় ১৭৬ জন, গ্রিসে এক হাজার ১৫৬ জন, পর্তুগালে ১১২ জন, ফিনল্যান্ডে ১০৯ জন, ইসরায়েলে ১০০ জন, কুয়েতে ১০০ জন, মিসরে ৯৩ জন, আয়ারল্যান্ডে ৯০ জন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৮২ জন আক্রান্তের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের একজন দিল্লিতে অপরজন কর্নাটকে মারা গেছে।

এ ছাড়াও দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী দুই সপ্তাহ সৌদিতে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের ২৬ দেশে আগামী এক মাসের ফ্লাইট বাতিল করেছে।

দেশের সার্বিক অবস্থা : দেশের তিন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। গতকাল শনিবার দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমাদের তিনজন রোগীই এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নতুন করে কেউ আর করোনা আক্রান্ত হয়নি। এর মধ্যেই ইতালির বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশে ফেরা ১৪২ জন বর্তমানে আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তাদের প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিস্তারিত জেনে ও দরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফ্লোরা বলেন, যেসব দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, সেসব দেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তাই স্কুল-কলেজ বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না।

গতকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে তিন হাজার ৬৮৫টি কল এসেছে। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত তিন হাজার ৬০৩টি কল ছিলো।

এসময়ে ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যদিও কেউ শনাক্ত হয়নি। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ৯ জন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন।চারজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সরকারি অর্থায়নে দিল্লিতে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন শেষে ২৩ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ভারতীয় বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।

এর আগে তারা উহান থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয়দের সাথে আসেন। দিল্লি পৌঁছানোর পর তাদের শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইন শেষে গতকাল তাদের দেশে নিয়ে আসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আমারসংবাদ/এসটিএমএ