Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

গায়ে হাত দিলেই ব্যাথা পাচ্ছেন খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৭, ২০২০, ১১:০৩ এএম


গায়ে হাত দিলেই ব্যাথা পাচ্ছেন খালেদা

 

২৫ মাস কারাভোগের পর গত বুধবার মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি। সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কোয়ারেন্টিনের প্রথম দিনটি কেমন কেটেছে, বৃহস্পতিবার তা দেখে এসেছেন চিকিৎসকরা।

মুক্তির পর খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজার দোতলায় থাকছেন। সেখানে নিকটাত্মীয়দের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার কক্ষে যেতে হলে পাশের আরেকটি কক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর খালেদা জিয়ার বাসায় প্রফেসর ডা. এফএফ রহমান, প্রফেসর ডা. রজিবুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. আব্দুল কুদ্দুস, প্রফেসর ডা. হাবিবুর রহমান, প্রফেসর সিরাজ উদ্দিন ও প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গিয়েছেন।

ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়া সেলফ কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তার অবস্থা আগের মতোই। তবে বাসায় নিজস্ব পরিবেশে অবস্থান করার কারণে তার ভেতরে মানসিক স্বস্তি কাজ করছে।

তিনি বলেন, রোজই আমরা কোয়ারেন্টিন-আইসোলেশনের নিয়ম মেনে তাকে পর্যবেক্ষণ করব। আজ আমরা কিছু ওষুধের ডোজ কমিয়ে-বাড়িয়ে দিয়েছি। কোয়ারেন্টিন শেষে ওনার অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেও জানান জাহিদ হোসেন।

এর আগে খালেদার ছোট বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, তার শারীরিক অবস্থা তো খুবই খারাপ। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে, কথা বলতে পারছে না, উঠে দাঁড়াতে পারছে না, হাটতে পারছে না। সে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারছে না। গায়ে হাত দিলেই ব্যথা লাগছে- এরকম অবস্থা। খাওয়া দাওয়াও করতে পারছে না; খেলেই বমি হয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া কঠিন।

তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব বললেন একটা টিম করেছেন উনারা। কোন কোন ডাক্তার আছেন তাদের নাম আমার জানা নেই। এটা উনারাই দেখবেন। এছাড়া সে (খালেদা জিয়া) যাকে সাজেস্ট করবে সেভাবেই করা হবে।

সেলিমা ইসলাম আরো জানান, একটু সুস্থ্য হয়ে উঠলে, তার পছন্দমত হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হবে। সেই পর্যন্ত চিকিৎসার যাবতীয় দেখভাল করবেন পূত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের তো ইচ্ছে ছিল উনি মুক্তি পেলে আমরা বিদেশে পাঠাব উন্নত একটা হাসপাতালে। কিন্তু সেটি তো হয়নি। সে জন্য দেশেই যাতে উনি সর্বোচ্চ চিকিৎসা পান, সেটি আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।

খালেদার জামিনের জন্য আইনজীবীরা গত দুই বছরে বহুবার আদালতে গেছেন, কিন্তু জামিন হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে মার্চের শুরুতে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার খবর আসে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হলে খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে নেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়।

খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড কারাগারে গিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এরপর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। ওইদিন কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। ফের ফিরিয়ে নেওয়া হয় কারাগারে। এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করতে ও চিকিৎসা সেবা শুরু করতে পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুইদিন পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ফের একই হাসপাতালে আনা হয় তাকে।

২০১৯ সালের ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি সেখানে ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানান খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার। তার পাশের ৬২২ নম্বর কেবিনটিতে কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা অবস্থান করছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার (২৫ মার্চ) সাংবাদিকদের বলেছেন, দুটি শর্তে ভাইয়ের জিম্মায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে সরকার।

এর আগে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিকালে তার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার ভাই-বোন ও বোনের স্বামী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাহী আদেশে তাদের পরিবারের স্বজনের মুক্তি কামনা করেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১ ধারা অনুযায়ী বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দণ্ড স্থগিত করে ৬ মাসের জন্য বেগম জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকাকালীন খালেদা জিয়াকে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ওই সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

২৫ মাস কারাভোগের পর ছয় মাসের জন্য গত বুধবার বিকেল সোয়া চারটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে ছাড়া পান তিনি। বেলা দুইটার কিছু পর কারা কর্তৃপক্ষ মুক্তির ছাড়পত্র নিয়ে বিএসএমএমইউতে যায়।

আমারসংবাদ/জেআই