Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

৩ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত

মাহমুদুল হাসান

জুন ১৪, ২০২০, ০৬:৫২ পিএম


৩ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত

মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সদ্য নিযুক্ত স্বাস্থ্য সচিবের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় করোনা বিষয়ে ভীতি বেড়েছে।

ভাইরাস আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। কিছুদিন আগেও করোনা ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে হেয়ালিপনা লক্ষ্য করা গেছে।

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় কথা হয় আমেনা খাতুনের (৪৫) সাথে। ১০ বছর আগে স্বামী হারান তিনি। দুই মেয়ে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। সদরঘাট এলাকায় বিভিন্ন দোকানে দুই বেলা খাবার পৌঁছে দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

লকডাউনে বহু কষ্টে দিনাতিপাত করলেও পেটের দায়ে এখন আবার কাজে নেমেছেন। কিন্তু গত রাতে হেভিওয়েটদের মৃত্যুর খবর শুনে তিনিও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সারারাত ঘুমাতে পারেননি বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়া কত হাসি মশকরা করছি। গরিব মানুষ কাম করে খাই! মাস পড়ার তো অভ্যাসই ছিলো না! কিন্তু কাইল রাইতে (শনিবার) স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের মৃত্যুর খবর দেখে ভয় পাইছি!

এখন আর ঘর তোন বাইর হতে মন চায় না। কিন্তু কি করমু আমাগো খাওয়াইবো কেডা! পেডের দায়ে বাইর হতে হয়।’ এমন আতঙ্ক শুধু আমেনা বেগম নয়, আরও অনেকের মনে বাসা বেঁধেছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, করোনায় মৃত্যুর ৩৯ শতাংশ ষাটোর্ধ্ব। এরপর ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে রয়েছে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

সে হিসেবে দেশের বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। অনেকের মনেই এখন জল্পনা-কল্পনা একটাই- বয়স্ক লোকের করোনা হলে রক্ষা নেই। তাই উদাসীনতা থেকে বেরিয়ে অনেকের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন।

এছাড়াও স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নানের সহধর্মিণী কামরুন্নাহার করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন। এদিকে গত শনিবার পর্যন্ত দেশে চিকিৎসক, নার্সসহ আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। মৃত্যু হয়েছে ২৮ চিকিৎসকের। সেই সাথে করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে আরও পাঁচ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত এক হাজার তিনজন চিকিৎসক, ৮৫৩ জন নার্স এবং এক হাজার ৩০৮ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল মারা যান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈনউদ্দীন আহমেদ। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এরপর গত মে মাসে মোট ১২ জন চিকিৎসক মারা যান। এরপর চলতি জুন মাসে মারা যান ২০ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে মে মাসে চারজন এবং জুন মাসে একজন চিকিৎসক কোভিড-১৯ এর লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বাসায় আইসোলেশনে আছেন। চিকিৎসরা বলেছেন তার ফুসফুসে একটা শ্যাডো আছে, তাতে ভয়ের কিছু নেই। এর আগে তার স্ত্রী, কন্যা ও জামাতাও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা সবাই বর্তমানে সুস্থ হওয়ার পথে।

দেশের সবশেষ অবস্থা : গত একদিনে আরও ৩২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা। এনিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো এক হাজার ১৭১ জনে। এ সময় আরও তিন হাজার ১৪১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত হলেন ৮৭ হাজার ৫২০ জন। সেই সাথে সুস্থ হয়েছেন ৯০৩ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হলেন ১৮ হাজার ৭৩০ জন।

গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে অংশ নিয়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, একদিনে ৬০টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৯০টি, নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০৫টি। এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ এক হাজার ৪৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

নমুনা পরীক্ষার মধ্যে গত একদিনে শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ১৪১ জন। এসময় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ।

নাসিমা সুলতানা জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৭ জন পুরুষ এবং পাঁচজন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে দুজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন রয়েছেন।

অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জন, সিলেট বিভাগের দুজন, ময়মনসিংহ বিভাগের একজন, রংপুর বিভাগের একজন এবং বরিশাল বিভাগের একজন রয়েছেন। ২৭ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২০ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় একজনকে।

আমারসংবাদ/এসটিএম