Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

ঈদের জামাত মাঠে হলে কী ক্ষতি

বেলাল হোসেন

জুলাই ১৩, ২০২০, ০৭:৩৮ পিএম


ঈদের জামাত মাঠে হলে কী ক্ষতি

দেশে করোনা শনাক্তের প্রায় চার মাস হতে চলেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হারে এখনো ঊর্ধ্বগতি থামেনি। করোনায় মৃত্যুর পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে সবকিছু বন্ধ করে দিলেও এখন সরকারি নির্দেশনায় সীমিত পরিসরে সবকিছু চালু। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস, গণপরিবহনে চলাচল করছে মানুষ।

তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নেই কোনো বালাই। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশে শুরু হয়েছে কুরবানির পশুরহাট। রাজধানীতেও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে পশুরহাটের স্থান। সরকার থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললেও কে শোনে কার কথা।

রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারে সবকিছু চলছে আগের মতোই। এ প্রেক্ষিতে গেলো রমজানের ঈদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ ঈদের নামাজের জামাত মসজিদে আদায় করেছিল।

এবারো সংক্রমণ এড়াতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাত মসজিদে আদায় করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে সাধারণ জনগণ বলছেন, ঈদের নামাজের জামাত মাঠে পড়লে ক্ষতি কি? সবকিছুই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হচ্ছে, ঈদের নামাজে বারণ কেন?

মসজিদে তো সেই গাদাগাদি করে মানুষ নামাজ পড়ছেন। এখানেও তো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকেই এখন মাস্ক পরে আসেন না, নিজস্ব জায়নামাজ খুব কম লোককেই ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে ঈদের জামাত মাঠে হলে বড় জায়গা একটু ফাঁকাভাবে বসে নামাজ পড়তে পারতাম বলে অনেকেই জানিয়েছেন।


এদিকে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেছেন, শরিয়তে বিকল্প আছে। বিশেষ সময়ে মসজিদে নামাজ পড়া যায়। তবে স্বাস্থ্যবিধিটা শুধু মসজিদে ভালো কার্যকর হচ্ছে। এটা যদি সর্বক্ষেত্রে মানা হতো দেশের জনগণ উপকৃত হতো।

শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ আমার সংবাদকে বলেন, ঈদের জামাত তো স্বাভাবিক সময়েও মসজিদে হয়। তিনি বলেন, ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে একটা ঈদের মাঠ আছে। অথচ মাঠে গিয়ে নামাজ আদায় করবেন এরকম লোকের সংখ্যা কিন্তু ৭০ লাখের ওপর আছে। সুতরাং এখানে তো স্বাভাবিকভাবেই বেশির ভাগ লোকজন ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করেন।

তিনি বলেন, এখন একটা সংকট সময় পার করছি। আবার যেহেতু মসজিদে পড়া জায়েজ আছে সেহেতু এখানে আবেগতাড়িত হওয়ার প্রশ্ন নেই।

ফরিদ উদ্দিন মাসউদ আরও বলেন, যদি শরিয়তে বিকল্প না থাকতো তাহলে আমরা আলেমরা বসে শক্ত অবস্থানে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটা মাঠে পড়ার ব্যবস্থা করতাম।

কুরবানির পশুরহাটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা তো আমাদের শরিয়তের সাথে সম্পর্কিত না। এটা দেখবে প্রশাসন। তবুও এটার বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে সেটা করা দরকার। স্বাস্থ্যবিধি মানা দরকার বলে জানান আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

এ বিষয়ে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবুল কাসেম গাজী আমার সংবাদকে বলেন, ঈদের জামাত রাসুল (সা.) মাঠে পড়তে বলেছেন। তবে সমস্যার কারণে মসজিদেও পড়া জায়েজ আছে। আবার ভিন্ন ভিন্ন জামাত করেও পড়া যায়।

তিনি বলেন, এখন যেহেতু করোনার মহামারি চলছে সেক্ষেত্রে মসজিদে পড়াই ভালো। অধ্যাপক আবুল কাসেম গাজী বলেন, মসজিদের ভেতরে যে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে সেটা কিন্তু হাটে-বাজারে, গাড়িতে, এখানে-সেখানে মানার বালাইটা খুব বেশি দেখা যায় না।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিভাগের তো ‘হ য ব র ল’ অবস্থা। সবকিছু চলছে ধুমধারাক্কা ভালো মতোই। করোনার এখন যেনো কোনো প্রভাব নেই। শুধু স্বাস্থ্যবিধিটা ভালো করে কার্যকর হচ্ছে মসজিদের জামাতে, ঈদের জামাতে, তারবির জামাতে। এতে কোনো সমস্যা নেই।

ইসলামে সবকিছুরই বিকল্প রাস্তা রেখেছে উল্লেখ করে মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক বলেন, দাঁড়িয়ে নামাজ না পড়তে পারলে বসে পড়বে, যদি তাও না পারে সে কিন্তু শোয়া অবস্থায়ও নামাজ পড়তে পারে। ইসলাম শরিয়তে বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে। তবে সবক্ষেত্রে যদি স্বাস্থ্যবিধিটা ভালোভাবে মানা হতো, তাহলে দেশের মানুষ উপকৃত হতো বলে জানান আবুল কাসেম গাজী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, মে মাসের শেষ ১৬ দিনে দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৭শ মানুষের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অন্যদিকে, ২৫ মে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার ঠিক দুই সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা গড়ে তিন হাজার পেরিয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশুরহাট ও কুরবানি ঘিরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া না গেলে ঈদুল আজহা পরবর্তী সময়েও করোনা সংক্রমণের এমন উল্লম্ফন দেখা দিতে পারে।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে গত ২৫ জুন পশুরহাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কুরবানি ও দ্রুত বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি পর্যালোচনা বিষয়ক এক অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুরবানির পশুরহাট বসবে।

আমারসংবাদ/এসটিএম