Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১১ মে, ২০২৪,

হরিরামপুরে হঠাৎ পদ্মায় ভাঙন, কাঁদছে মানুষ

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

মে ২৭, ২০২০, ০৫:২০ পিএম


হরিরামপুরে হঠাৎ পদ্মায় ভাঙন, কাঁদছে মানুষ

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পরে পদ্মার পানি বেড়েছে। এতে চলমান বাতাসে সৃষ্ট তীব্র ঢেউয়ে পদ্মায়  ভাঙন শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পদ্মাপাড়ের লোকজন।

নিজের বাড়ি হারিয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের শিরিয়া বেগম জানান, 'বিশ বছর আগে একবার পদ্মার ভাঙনে সব হারিয়ে এখানে এসে জায়গা কিনা বাড়ি করছিলাম। এখন আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এখানে তাও নিজের জায়গা ছিল, এহন তো পরের জায়গায় যাইয়ে থাহা (থাকা) লাগবে।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েকবছর আগে। তার একমাত্র ছেলে চাকরির কারণে এখন ঢাকায়, একা এই বিপদে দিশেহারা তিনি। পদ্মায় ভাঙন শুরু হওয়ায় এখন এখান থেকে ঘর ভেঙে পার্শবর্তী পয়মালী নিয়ে অন্যের জায়গায় বাড়ি করবেন।

শুধু শিরিয়া বেগমই নন, উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, বয়ড়া ও গোপীনাথপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী তীরবর্তী  শতাধিক পরিবার এখন  ভাঙন আতঙ্কে আছেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকেই পদ্মায় তীব্র ঢেউয়ের কারণে নদীভাঙন শুরু হয়েছে।

আজ বুধবার সরজমিনে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ফ্লাড এন্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টম্যান প্রোগ্রামের (প্রথম পর্যায়) আওতায় নির্মিত ৯ কিলোমিটার বেড়িবাধের রামকৃষ্ণপুর ও বয়ড়া ইউনিয়নের পদ্মানদী তীরবর্তী আন্ধারমানিক, খালপাড় বয়ড়া, দাসকান্দি, ভাওয়ারডাঙ্গী, দড়িকান্দী, বকচর, জগন্নাথপুরের বিভিন্ন অংশে ধ্বসে পরেছে। এছাড়াও নদী পাড়ের বসত বাড়ির ভিটি জমি ও কৃষি জমি ভাঙছে। ভাঙনের ভয়ে অনেকে নিজের জমি থেকে গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।

গত কয়েক বছরে এসব এলাকার কয়েকটি গ্রাম, ফসলী জমি, সরকারি স্কুল নদীতে বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই।

পদ্মানদীর কড়াল গ্রাস থেকে হরিরামপুর উপজেলা রক্ষায় "পদ্মা ভাঙ্গন থামাও হরিরামপুর বাঁচাও" নামে ফেসবুক গ্রুপের ব্যানারে দাবি জানিয়ে আসছেন গ্রুপের সদস্যরা। দাবি আদায়ে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডে, জেলা পরিষদেও  স্মারক লিপি (গণস্বাক্ষর সম্বলিত) দেয়া হয়েছে।

আন্দোলন কারীদের বকচর গ্রামের একজন জানান, বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার কারণে আমরা হরিরামপুর বাসী পদ্মা ভাঙন হতে কিছুটা মুক্তি পেলেও  হরিরামপুরে পদ্মাপাড়ের এলাকায় স্থায়ী একটা ব্যবস্থার পাশাপাশি নব নির্মিত বেড়িবাধের রিপেয়ারীং করা খুবই জরুরি।

ভাঙন আতঙ্কে থাকা দড়িকান্দী গ্রামের মো. ফজর আলী জানান, পদ্মা নদী আমাগো(আমাদের) নিঃস্ব করে দিছে, অবশিষ্ট যা আছে, তা যদি ভেঙ্গে যায় তবে আমাগো রাস্তায় থাহুন লাগবো।

খবর পেয়ে আজ বুধবার মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নদী ভাঙন পরিদর্শন করেছেন।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তারা দেখে গেছেন, তারা ব্যবস্থা নিবেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহযোগিতার ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, আজকে আমরা ভাঙন পরিদর্শন করেছি। জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা দরকার বলে আমরা বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা অনুমতি দিলে আমরা কাজ শুরু করবো।

আমারসংবাদ/এমআর